April 19, 2024, 10:42 pm

স্বর্ণের দাম বাড়বে বা কমবে না, বন্ধ হবে ভ্যাট ফাঁকি

স্বর্ণের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট ও মজুরি যোগ করে পুনরায় মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা করেছেন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) সদস্যরা। এতে করে দেশে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাবে বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। তবে নতুন এ নিয়ম কার্যকর হলে স্বর্ণের দাম বাড়া বা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বাজুসের দায়িত্বশীলরা।

তারা জানান, স্বর্ণালঙ্কারের ভ্যাট ও মজুরি এখনো আছে। কিন্তু অনেক সময় ব্যবসায়ীরা অসুস্থ্য প্রতিযোগিতায় নেমে এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য ভ্যাট গোপন করে স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করেন। এই ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ করতে স্বর্ণের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন এই নিয়ম কার্যকর হলে এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্বর্ণালঙ্কারে এখনো ভ্যাট আছে। আমার ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড থেকে এখন এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার কিনতে প্রায় ৮০ হাজার টাকা লাগে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলেও এই দাম হবে। নতুন নিয়মের ফলে স্বর্ণালঙ্কারের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

তাহলে নতুন নিয়মে কী পরিবর্তন হবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘নতুন নিয়ম কার্যকর হলে বাজুস ভ্যাটসহ স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করে দেবে। তখন স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসায়ীরা বিক্রির সময় আর ভ্যাট যুক্ত করবেন না। সুতরাং এই নিয়মের ফলে স্বর্ণালঙ্কারের দাম বাড়বে না। তবে ভ্যাট ফাঁকি বন্ধ হবে। কারণ ভ্যাটযুক্ত করে দাম নির্ধারণ করায় সব ব্যবসায়ী ভ্যাট দিতে বাধ্য হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজুসের অতিরিক্ত সাধারণ সভায় (ইজিএম) স্বর্ণের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট ও মজুরি যোগ করে পুনরায় মূল্য নির্ধারণ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখনই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না। এই নিয়ম আসলেই কার্যকর হবে কি-না সে সিদ্ধান্ত হবে বাজুসের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাজুসের এক সদস্য বলেন, ‘স্বর্ণালঙ্কারে ভ্যাট নতুন কিছু না। এখনো ভ্যাট আছে। তবে পরিচিত ক্রেতা আসলে অনেক সময় ব্যবসায়ীরা ভ্যাট বাদ দিয়ে অলঙ্কার বিক্রি করেন। এতে ক্রেতা কিছুটা কম দামে অলঙ্কার কিনতে পারেন। কিন্তু এর ফলে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।’

কীভাবে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভ্যাটের টাকা না দেয়াযর কারণে ওই ক্রেতা ভ্যাট চালান নেন না। এর সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী ওই বিক্রির তথ্য গোপন করেন। ফলে সরকারকে ভ্যাট দেয়া লাগে না। এ কারণে স্বর্ণের মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যোগ করে মূল্য নির্ধারণ করার দাবি উঠেছে। এতে একদিকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে, অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়বে।’

এদিকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাজুসের ইজিএমের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, দেশিয় জুয়েলার্সরা যতদিন পর্যন্ত সক্ষমতা অর্জন না করতে পারে, ততদিন বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। এ বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা হবে।

সেইসঙ্গে ভ্যাট হার হ্রাস ও অসাধু ভ্যাট কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত ইজিএমে কণ্ঠভোটে পাশ হয়।

সভায় বাজুসের বিভিন্ন জেলা কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা অংশ নেন। পাশাপাশি সাধারণ জুয়েলার্সরাও অংশ নেন এই ইজিএমে।

এদিকে বাংলাদেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সর্বশেষ পুনঃনির্ধারণ করা হয় গত ১৩ জানুয়ারি থেকে। ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাজুসের কর্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৩ জানুয়ারি থেকে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণ ৭২ হাজার ৬৬৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে ভ্যাট ও মজুরি যোগ করে এক ভরি ভালো মানের স্বর্ণালঙ্কার কিনতে ক্রেতাদের প্রায় ৮০ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৯ হাজার ৫১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৭৬৯ টাকায় ও সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি স্বর্ণ ৫০ হাজার ৪৪৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। আর এই মানের স্বর্ণালঙ্কার কিনতে ক্রেতাদের পাঁচ শতাংশ ভ্যাট ও মজুরি যোগ করে মূল্য পরিশোধ করতে হয়।



ফেসবুক পেইজ