April 25, 2024, 7:50 pm
ব্রেকিং :
লক্ষ্মীপুরে তীব্র তাপদাহে বায়েজীদ ভূঁইয়ার উদ্যোগে পানি ও স্যালাইন বিতরণ লক্ষ্মীপুরে প্রশিক্ষণ শেষে ৪ শতাধিক হাস-মুরগীকে ভ্যাকসিন প্রদান লক্ষ্মীপুরে পোল্ট্রি ভ্যাকসিন প্রদান বিষয়ক প্রশিক্ষণ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে বায়েজীদ ভুঁইয়ার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তে শ্রদ্ধা লক্ষ্মীপুরে যুবলীগের আয়োজনে ৭ মার্চ পালিত লক্ষ্মীপুর জেলা ট্রাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত লক্ষ্মীপুরে নিবন্ধন পূর্ব অবহিতরন সভা ও প্রশিক্ষণ লক্ষ্মীপুর সদরে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় নুরনবী চৌধুরী লেখাপড়া করেই অনেক বড় হতে হবে: ঢাবি উপাচার্য লক্ষ্মীপুরে জেলেদের মাঝে গরু বিতরণ

লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় অবাধে চিংড়ি রেণু পোনা আহরণ,ধ্বংস হচ্ছে মূল্যবান জীববৈচিত্র

লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে বাগদা চিংড়ি পোনা আহরণ মৌসুমের তিন মাসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের মৎস্য সম্পদ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।জেলার রায়পুর থেকে রামগতি উপজেলার টাংকি বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় চলে আহরণ উৎসব। প্রতি বছর বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত পুরো এলাকা জুড়ে কমপক্ষে ৪০ হাজার শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সী নারী, পুরুষ এসব চিংড়ি পোনা শিকারে মেতে ওঠে।

লক্ষ্মীপুর সদর এবং কমলনগর উপজেলা চর রমনী মোহন ইউনিয়নের বুড়িরঘাট সংলগ্ন প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকায় অন্তত ১৫শ থেকে ২ হাজার বাগদা পোনা আহরণকারীর দেখা যায়। এসময় বাগদা চিংড়ি পোনার সাথে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পোনা-ডিম মশারি জালে উঠে আসে। মেঘনার বুকের দ্বীপর চর কালকিনিতেও দেখা যায় অসংখ্য আহরণকারী। এসব রেণু চালান করা হয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার এব চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

স্থানীয় আমজাদ জানায় একবার মশারি জাল টেনে বাছাই করে মাত্র ২১টি বাগদা পাওয়া যায়। আর অন্য প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় ৭শ ২৯টি। এতে ইলিশ, কোরাল, পোয়া, চেউয়া, লইট্টা, ভেটকি, পাঙাশ, রিটা, বাছা, বাতাসি, বাইলা, বাটা, কাঁকড়া, কুচিয়া, পাবদাসহ নাম না জানা অসংখ্য প্রজাতির মাছ পোনা শিকারীদের জালে নষ্ট হয়।

এছাড়া ছোট ছোট অনেক অজানা পোকামাকড়ও দেখতে পাওয়া যায়। শিকারীরা বাগদা পোনা নেয়ার পর ছোট অন্য মাছগুলো নদীর তীরেই ফেলে দেয় ফলে ধ্বংস হয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র। এভাবেই তো প্রতিদিন কোটি কোটি মাছ নষ্ট হয়। অথচ প্রশাসনের অভিযান শুধু ব্যবসায়ীদেরর মধ্যেই দেখা যায়।

তবে পরিস্থিতি নিয়েন্ত্রণের আনতে মৎস্য বিভাগ ও প্রশাসন শুধু পোনা ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভিযান সীমাবদ্ধ রেখেছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। অন্যদিকে পোণা আহরণকারীরা বলেছেন, প্রশিক্ষণ পেলে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলে জীববৈচিত্র্য রক্ষা করেই এ মৌসুমে প্রায় হাজার কোটি টাকা মূল্যের চিংড়ি পোণা আহরণ সম্ভব।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন জানান চিংড়ি রেণু পোনা ধরার সময় স্থানীয়দের দ্বারা নষ্ট হওয়া জলজ প্রাণীর বাজার মূল্য নির্ণয় করা হয়নি। তবে এর মূল্য বিশাল হবে। তিনি আরো জানান, ব্যবসায়ীরা পোনা কেনার কারণে স্থানীয়রা ধরে আর সেজন্যই মূলত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান করা হয়। তিনি শিকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে বলেও জানান।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও মৎস্য অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ বেলাল হোসেন জানান, চিংড়ি পোনার আহরণের সময় অন্য মৎস্য সম্পদের ক্ষতির মূল্য নির্ধারণে আনুষ্ঠানিক গবেষণা হয়নি।তবে তিনি অভিজ্ঞতার ব্যাখা দিয়ে জানান, একজন শিকারী প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ১০ বার মাছ বাছাই করেন। প্রতিবার কমপক্ষে মাত্র ১শটি পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করলে দিনের ৪ ঘন্টায় সে ৪ হাজার পোয়া মাছের বাচ্চা নষ্ট করে। এভাবে ওই অ ল একদিনে শুধু পোয়া মাছই ১শ ৬০ কোটি নষ্ট হতে পারে। প্রতিটি মাছের মূল্য ১ টাকা হলেও পুরো মৌসুমের মাত্র ৭০ দিনে এ ক্ষতি দাড়াঁয় গড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য মূল্যবান মাছের হিসাব ছাড়াই এ ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, একটি বাগদার পোনা আহরণে অন্যান্য প্রায় ৭০-৮০টি সাদা মাছের প্রজাতির পোনা এবং প্লাঙ্কটন নিশ্চিত ধ্বংস হয়।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, বাংলাদেশের পুরো উপকূলেই এভাবে চিংড়ি পোনা ধরা হয়। জেলার ৪টির উপজেলা রামগতি, কমলনগর, সদর ও রায়পুরের মেঘনা নদী ও ততসংলগ্ন সংযোগ খাল থেকে রেণু আহরণ মৌসুমের প্রতি মাসে আহরিত হয় প্রায় দেড়শ কোটি বাগদা চিংড়ির রেণু। প্রায় ৪০ হাজার স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলে এ পোণা ধরে। ৪টি উপজেলার প্রায় ২শ ৫০ জনের বেশি স্থানীয় ব্যবসায়ী চিংড়ি রেণুর এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের প্রত্যেকের অধীন ২শ এর মতো শিকারী আছে।মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে উপকূলীয় এলাকা থেকে বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্ত পোনার সাথে নদীর তীরের মানুষের বড় ধরণের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত থাকার কারণে আইন করে আর অভিযান চালিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জেলেসহ স্থানীয়রা অভিমত দিচ্ছে, ইলিশ রক্ষার মতো সচেতনা বাড়িয়ে চিংড়ি রেণু আহরিত হলে ক্ষতি কিছু কাটিয়ে ওঠা যাবে। নতুবা এ ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড কমানো সম্ভব নয়।



ফেসবুক পেইজ