April 14, 2024, 6:49 pm

রামগঞ্জে করোনা যোদ্ধা শিক্ষক সেলিমের গল্প

রামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী নানা সময়ে নানান মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখেছি আমরা। তবে বিশাল এ পৃথিবীতে এই মানুষগুলোর সংখ্যা একেবারেই যৎসামান্য। তারপরও এই মানুষগুলি আছে বলেই আহাজারি পৃথিবীটা এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। হৃদয়হীনা দরিয়ায় ভালোবাসার মেলবন্ধন তৈরি করা এক শিক্ষকের গল্প বলব আজ।

বলছি লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম শোশালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম হোসেন এর কথা। উপজেলার ৭নং দরবেশপুর ইউনিয়নের দক্ষিন দরবেশপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির মৃত নুর মিয়া চকিদারের মেধাবী ছেলে সেলিম।

৪ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সেলিম হোসেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রাম একজন হোমিয় চিকিৎসা দিয়ে সাধারন মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। দেশব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে করোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে লাশের গোসল, জানাজা ও দাফন নিয়ে দুচিন্তায় পড়েন পরিবারের লোকজন। প্রতিবেশীদের চাপের মধ্যে গৃহবন্দীও হয়েছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা।এ অবস্থায় রোদ, বৃষ্টি, ঝড়সহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে উপজেলার পশ্চিম শোশালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে ১৫ জন মানবিক সদস্য কাজ করছে ইসলামি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে রামগঞ্জ উপজেলা লাশ দাফন কমিটিতে।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, এ পর্যন্ত তারা করোনা কিংবা উপসর্গে মৃত মোট ২২জনের লাশ দাফন করেছে। এর মধ্যে উপজেলার শেফালীপাড়া এলাকার তছলিম উদ্দিন, আশার কোটা এলাকার মমতাজ বেগম, নন্দন পুর এলাকার রহুল আমিন,বদর পুর এলাকার আবুল কাশেম, শ্রীরামপুর এলাকার জাহানারা বেগম, পশ্চিম শোশালিয়া এলাকার কোহিনূর বেগম ও নূরনবী, দরবেশপুর এলাকার শিশু সিফাত, জগৎপুরের সাহাব উদ্দিন, আউগানখীল এলাকার আবদুল হালীম পাটওয়ারী, পূর্ব শোশালীয়া এলাকার রাইছা আক্তার, লামচরের নরুল হুদা ও ইছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ সহিদ উল্যাসহ এ পর্যন্ত ২২টি লাশ দাফন করেছে।

এব্যপারে জানতে চাইলে উপজেলা লাশ দাফন কমিটির সভাপতি, পশ্চিম শোশালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম হোসেন বলেন,করোনা ভাইরাসের শুরুতে গত মার্চে লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন অফিসে প্রশিক্ষন নিয়ে ১৫সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে মানবিক বিবেচনায় লাশ দাফনের কাজ শুরু করি। সমস্ত ভয়কে জয় করে অদ্যবধি পর্যন্ত আমরা সমাজের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে মানুষ লাশ দাফন করতে পারছে না, অনেকে ভয়ে জানাজায় আসছেন না, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। উপজেলার যেখানেই আমাদের খবর দেওয়া হবে, আমরা সেখানে গিয়েই মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করে আসবো।

রামগঞ্জ উপজেলার লাশ দাফন কমিটির সমন্বয়ক শামসুল ইসলাম বলেন, কারোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে কেউ মারা গেলে স্বজনরা কাছে আসে না। তাই ইসলামি ফাউন্ডেশনের লাশ দাফন কমিটির সদস্যরা শরিয়া মেনে সরকারি আইন অনুযায়ী দাফনের দায়িত্ব নিয়েছে।



ফেসবুক পেইজ