April 25, 2024, 12:33 am

লক্ষ্মীপুর রায়পুরের ১২ বছর বয়সী মরিয়মের উক্তি ধন্যবাদ দেন আমনে ১টা বই কিন্না নেন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :মরিয়ম, বয়স (১২)। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর সরকারি হাসপাতাল গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে লুঙ্গি পড়া জনৈক ব্যাক্তির কাছে-শিশুদের বই বিক্রি করছেন। আমিও একটা বই চাইতেই সে দিগুন দাম চাইলো ।
এতো দাম চাও কেনো প্রশ্নের উত্তরে সে নরম কন্ঠে বললো-কিনতেন না কিল্লাই-কন ? ৪ দিন আগে ভিক্ষা করা ছারি দি এহন বই বেছি । ধন্যবাদ দেন আর আমনে ১টা বই কিন্না নেন। তখন ৪০ টাকার বই ৭০ টাকায় কিনলে সে খুবই খুশি হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে রায়পুর হাসপাতালে র সামনে মরিয়মের সাথে কথা হলে, সে তার কষ্টের কথা বলে কেঁদে দেয় আর চিকিৎসার জন্য ধর্ণাঢ্য ব্যাক্তি ও সরকারের কাছে সহযোগিতাও চেয়েছে।
মরিয়ম জানায়, আঁর আব্বার বাড়ি ফরিদপুর শহরে। আর আম্মার বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকার ফকির বাড়ি। আমরা দুই দুই বোন ও এক ভাই। আঁই বেকের বড়। আঁই ফাইবে হড়ি। আঁর খুব অসুখ (পায়ু পথে রক্ত ঝড়ে )।

আঁর খুব কষ্ট। আঁর মা’রে কেও সাহায্য দেয় না। আম্মা কইছে, আব্বাগো বংশে প্রথম হোলা না অওয়ায় আম্মা’কে নানার বাড়িতে রাখি চলি গেছেন। আর আসেন নাই। হুইনছি হেতেনে আবার আরেক বিয়া কইচ্ছেন।

হরে আঁর মা’ও আবার আরেক বেডারে বিয়া কইচ্ছে। হেই বেডায় রিসকা চালায়। কয়দিন আগে রিসকাডাও চুরি হই গেছে। এখন আন্ডা বেকে নানার বাইত্তে থাহি। লকডাউনে স্কুল বন্ধ। ভিক্ষা করি যেই টেয়া হাইতাম, হেগিন দি আঁর ওষুধ কিনতাম ও ছোড দুই ভাই-বোনরে কিছু কিনি দিতাম। এহন হেই টেয়া দি কিছুই অয় না।

মরিয়ম আরো বলেন, শুক্কুরবার (চারদিন আগে) রায়পুর শহরের বড় মসজিদের সামনে দাঁড়াই আছিলাম। এক বেডা আহি আমার বলে, কিছু বই কিনি দেই। সেগুলো বেছি টাকা লই তোমার মারে দিও। ভিক্ষা করিও না।

হেইদিন থাকি ভিক্ষা ছাড়ি দি -এহন হাসপাতালের সামনে ও বাজারে হাঁটি হাঁটি বই বেছি। হত্তেকদিন ৭/৮ বই ৫০০/৬০০ টেকা বেছি। ৩০০/৪০০ টেকা লাভ হয়-হেই টেয়া মা’রে নিয়া দি। কিন্তু রাস্তার মইদ্দে বড্ডা হোলারা খারাফ কতা কয়। আর খুব ডর লাগে। কেও যদি আঁরে অসুখের টেয়া দিতো। তাড়াতাড়ি বালা অই যাইতাম। এসময় এক ব্যাক্তি মরিয়মকে কিছু টাকা দিয়ে ভাত খেতে বললে, সে টাকা নিয়ে চলে যায় ।
উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা গড়তে উপজেলা প্রশাসন ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিলেও। পরে তা কখনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে ইউএনও সাবরীন চৌধুরি বলেন, শিশু মরিয়মের আগ্রহের কথা শুনে ভালো লেগেছে। ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে শিশু বয়সে বই বিক্রি করছে। আমি হতবাগ হলাম। তাকে সহযোগিতা দেয়া হবে। ভিক্ষুকমুক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো।



ফেসবুক পেইজ