March 22, 2024, 1:26 am
ব্রেকিং :

আমরা ভণ্ড জাতি,জ্ঞানীদের কদর জানি না,তাই এদেশে জ্ঞানী জন্মায় না : রুবেল হোসেন

বিশ্বজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য বিজ্ঞানীরা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এর মাঝেই কভিড-১৯ রোগের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের দাবি করেছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড। এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের সিইও ড. কাকন নাগ এবং সিওও ড. নাজনীন সুলতানা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান ডা. আসিফ মাহমুদ। তার এই কান্না দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন দেশবাসী।

এর মাঝেও কিছু পরশ্রীকাতর লোক এই ভ্যাকসিন আবিস্কার নিয়ে বিরূপ মন্তব্য শুরু করেন। তাদের এমন লজ্জাজনক আচরণে ভীষণ চটে গেছেন জাতীয় দলের তারকা পেসার রুবেল হোসেন।

আজ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে রুবেল লিখেছেন, ‘আসিফ মাহমুদ ভাই যখন বলছিলেন যে আমরা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছি, কথাটি বলতে বলতেই উনার কান্না চলে আসছে! বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান সাহস নিয়ে দাবি তো করতে পারল যে তারা আবিস্কার করছে, সফল হোক ব্যর্থ হোক সেটা পরের বিষয়।’

‘অথচ আমরা একটা অভিনন্দন পর্যন্ত জানালাম না। চীন বা আমেরিকা এই দাবি করলে এই আমরাই আবার অভিনন্দন অভিনন্দন জানিয়ে বাংলার আকাশ বাতাস মাতিয়ে দিতাম, আসলেই আমরা এক ভণ্ড জাতি। বিন্দু পরিমাণ কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের নেই। এই জন্যে এদেশে জ্ঞানী মানুষ জন্মায় না। কারণ জ্ঞানীদের কদর এদেশে নেই।

‘অনেকে হাসাহাসি করছে, ট্রলে মেতে উঠেছে যে বাংলাদেশ থেকে নাকি করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কার করবে! চেষ্টা তো করছে তারা, দেখা যাক না কী হয়! একটু অভিনন্দন তো তারাও পেতে পারেন! এরাই দেশের রিয়েল হিরো।’

আরও পড়ুন

ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বেচে মেয়েকে বিসিএস ক্যাডার বানালেন বাবা

বিরেণ সরকার। নিজের এক টুকরো জমি নেই। নেই বসতবাড়ি। একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে সিলভারের তৈরি হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ আর সংসারের ভরণপোষণ চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। লেখাপড়ার প্রতি দুই সন্তানের অদম্য ইচ্ছে দেখে নিজের দুঃখ-কষ্টগুলো নিরবে বয়ে বেরিয়েছেন।

নিজের সুখ-আহ্লাদের কথা চিন্তা করেননি বিরেণ সরকার। মনের নিভৃত কোণে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠতে থাকে একটি স্বপ্ন। একদিন প্রাণ খুলে হাসবেন। প্রশংসায় ভাসবেন। অবশেষে সেই স্বপ্ন আজ হাতের মুঠোয়! এখন তিনি বিসিএস ক্যাডারের বাবা। তার মেয়ে বিথী রানী সরকার এখন বিসিএস ক্যাডার।

কিশোরগঞ্জের নিভৃত হাওর উপজেলা নিকলী। নিকলী উপজেলা সদরের বড়হাটি গ্রামের বাসিন্দা বিরেণ সরকারের এক ছেলে ও এক মেয়ে। পরিবারের বড় সন্তান বিথি রানী সরকার। ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় তিনি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বিথির এমন সাফল্যে প্রশংসায় ভাসছেন তার বাবা-মা। আশপাশের লোকজন ভিড় করছে তাদের বাড়িতে। বিথির সাফল্যে বাবা বিরেণ আর গৃহিণী মা ময়না সরকারের মুখে যেন হাসি লেগেই আছে।

বিরেণ সরকারের বাড়ি মূলত মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। বাবা আর ভাইদের সঙ্গে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করতেই তিনি নিকলীতে আসেন। তবে এক সময় স্ত্রীকে নিয়ে স্থায়ীভাবে বসত গড়েন হাওর উপজেলা নিকলীতে। সেটি প্রায় ৩৮ বছর আগে।

নিকলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু বিথি রানী সরকারের। পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর স্থানীয় শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন ২০০৮ সালে। এরপর ভর্তি হন ঢাকার তেজগাঁও হলিক্রস কলেজে। সেখান থেকে ২০১০ সালে এইচএসসি পাস করেন। ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স শেষ করেন। বিথির একমাত্র ছোট ভাই জয় সরকার দ্বীপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে মাস্টার্সে পড়ছেন।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে উত্তীর্ণ হওয়া বিথি রানী সরকার বলেন, ৩৭তম বিসিএসে অংশ নিলেও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারিনি। তাই আরও প্রস্তুতি নিয়ে ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিই। পরে প্রিলিমিনারি ও চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। এ জন্য আমি আমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের অদম্য ইচ্ছায় আমি আজ সফলতার মুখ দেখেছি। বাবা-মা কষ্ট করে আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। বাবার ঋণ কোনো দিন শোধ করতে পারবো না। আমি শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছি। বিনয় ও সততার সঙ্গে মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করবো।

তিনি আরও বলেন, আশা ছিল প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেয়ার। ৩৯তম বিসিএসে আবারও অংশ নিব। চেষ্টা করবো প্রশাসন ক্যাডার পাওয়ার।

বিথির বাবা বিরেণ সরকার বলেন, আজ আমি কতোটা আনন্দিত সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না। গ্রামে গ্রামে ফেরি করে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করি। এই আয় দিয়ে সংসারের খরচ চালিয়েও দুই সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছি। আমার সুখ-স্বপ্ন সবই দুই সন্তানকে ঘিরে। রাতে চিন্তায় ঘুম হতোনা। ভাবতাম মেয়েকে বিয়ে দেব কিভাবে?

ভগবান অমাদের দিকে ফিরে তাকিয়েছে। এখন আর আমার সে চিস্তা করতে হবে না। স্বপ্ন দেখতাম মেয়ে একদিন বড় হবে। বড় চাকরি করবে। আমার সে স্বপ্ন আজ পূর্ণ হলো। এখন ছেলেটির একটি ভালো চাকরি হলে মরেও আমি শান্তি পাব।

বিথির স্বজনরা জানান, নিম্নবিত্ত একটি পরিবারের পক্ষে ঢাকায় থেকে লেখাপড়া করা প্রায় অসম্ভব ছিল। তাই খালার বাসায় থেকে লেখাপড়া করেছেন বিথি। চাচারা অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। বিথির বাবা বিরেণ সরকার নিকলী বাজারে একটি ছোট দোকান ভাড়া নিয়েছেন। সেখানে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন।



ফেসবুক পেইজ