লক্ষ্মীপুরে করোনা নমুনা সংগ্রহে নিয়মিত হিমসিম খেতে হচ্ছে।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়মিত হিমসিম খেতে হচ্ছে লক্ষ্মীপুরে স্বাস্থ্য বিভাগ জেলায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১৪ পদের মধ্যে ১০ টি পদ শূন্য রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে পর্যাপ্ত ভাইরোলজিস্ট এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সঠিকভাবে নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও পরীক্ষণে অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছে। সেই সাথে সংগ্রহ করা নমুনাগুলোর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অনেকে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সিভিল সার্জন কার্যালয়ে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ২ পদ, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কার্যালয়ে ১, সদর হাসপাতালে ১ জন,রায়পুর উপজেলা ২, রামগতি ২, কমলনগর ১, রামগঞ্জ ১ জন পদ শূন্য রয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ১ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে ১ জন এবং রামগঞ্জ ১ জন কর্মরত রয়েছে ফলে ১৪ পদের মধ্যে ১০ পদে লোকবল খালি রয়েছে। ২ জন ডেপুটিশনে রয়েছে। সদর ও রায়পুর উপজেলার একজন করে প্রশিক্ষণে রয়েছে। ফলে এ দুই পদ বর্তমানে শূন্য বলা যায়।
ফলে বর্তমান এই সংকটে মূর্হতে জোড়াতালি দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
ল্যাবে কর্মরতদের সুরক্ষা পেশাক ও মাক্সসহ যাবতীয় উপকরণ স্বল্পতা রয়েছে। জেলায় দিন দিন করোনা সংক্রমণ রোগী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যারা কর্মরত রয়েছে তারা আতংকের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।
এর মধ্যে রামগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ১ জন কর্মরত থাকলেও তিনি করোনা সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়ার কারনে বর্তমানে আইসোলেশনে রয়েছে।
জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য থাকার কারনে ইপিআই টিকদান কর্মসূচি লোকদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করোনা নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র দাবী করেছে। যদি ও নমুনা সংগ্রহে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞ টেকনোলজিস্ট কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: জাকির হোসেন বলেন, রায়পুর উপজেলায় টেকনোলজিস্ট পদে ২ জন থাকার কথা থাকলেও একজন রয়েছে তাও সেই ডেপুটিশনে রয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্র্যাকের একজন, ইপিআই কর্মসূচির একজন এবং টেকনোলজিস্ট সহকারী দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা করোনা সংক্রমণ বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ স্বাস্থ্য বিধি না মানায় এবং ঘরে না থাকার কারনে দিন দিন উপজেলায় করোনা সংক্রমন বাড়ছে। উপজেলা জরুরী ভিত্তিতে শূন্য পদে টেকনোলজিস্ট প্রয়োজন।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মো: নিজাম উদ্দিন জানান, সদর উপজেলায় টেকনোলজিস্ট ২টি পদের মধ্যে একজন কর্মরত রয়েছে। বাকী ১ জন প্রশিক্ষণে রয়েছে। ফলে ১ জনকে দিয়েই নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে তার উপর যেমন কাজের চাপ বাড়ছে অন্য দিকে তার ঝুঁকি ও বাড়ছে।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা: আবদুল গফফার জানান, জেলায় মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শূন্য পদের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রনালয় কে জানানো হয়েছে।
নতুন লোকবল নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত বেসরকারী পর্যায়ে লোক দিয়ে কাজ করানোর জন্য বলা হয়েছে। যারা হাসপাতালের ল্যাবে কিংবা নমুনা সংগ্রহের কাজে থাকবে তাদের অবশ্যই পর্যাক্রমে সুরক্ষা পোশাকসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ না হওয়ায় ঢাকার বাইরে স্থাপন করা বিভিন্ন ল্যাবে আধা-দক্ষ টেকনোলজিস্ট দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নীতিমালা অনুসারে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য যে পরিমাণ চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দরকার, বাংলাদেশ তা থেকে অনেক দূরে।
সংস্থাটির মতে, একজন চিকিৎসকের বিপরীতে অন্তত তিনজন নার্স এবং পাঁচজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকতে হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার জরুরি ভিত্তিতে দুই হাজারের বেশি চিকিৎসক এবং পাঁচ হাজারের বেশি নার্স নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। এ অবস্থায় পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টেকনোলজিস্টও নিয়োগ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যোগাযোগ করা হলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএসএম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আইনি জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।
তবে দক্ষ ল্যাব টেকনোলজিস্টদের ঘাটতি হ্রাসে সরকার খুব দ্রুত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে।
মো: রবিউল ইসলাম খান
লক্ষ্মীপুর