May 16, 2024, 2:39 am
ব্রেকিং :
লক্ষ্মীপুরে দোকান বিক্রির লোভ দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ লক্ষ্মীপুরে খোঁড়া গর্তে পড়ে প্রাণ গেল ভাই-বোনের লক্ষ্মীপুরে যুবলীগের ছাতা, স্যালাইন ও পানি বিতরণ ভোটের দিন কর্মীদের রোযা রাখার আহবান চেয়ারম্যান প্রার্থীর লক্ষ্মীপুরে তীব্র তাপদাহে বায়েজীদ ভূঁইয়ার উদ্যোগে পানি ও স্যালাইন বিতরণ লক্ষ্মীপুরে প্রশিক্ষণ শেষে ৪ শতাধিক হাস-মুরগীকে ভ্যাকসিন প্রদান লক্ষ্মীপুরে পোল্ট্রি ভ্যাকসিন প্রদান বিষয়ক প্রশিক্ষণ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে বায়েজীদ ভুঁইয়ার উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি তে শ্রদ্ধা লক্ষ্মীপুরে যুবলীগের আয়োজনে ৭ মার্চ পালিত লক্ষ্মীপুর জেলা ট্রাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত

লক্ষ্মীপুরে কোরবানির গরুর দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও বিক্রেতারা

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি ঃ
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে লকডাউনে বাজার পরিস্থিতি ও দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লক্ষ্মীপুরের খামারি ও বিক্রেতারা। এবছর জেলায় ২ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ খামারিদের হাতে রয়েছে বিক্রয়যোগ্য ৩০ হাজার ষাঁড়। কিন্ত ঈদ বাজারের আগেই শুরু হওয়া লকডাউনের কারণে গরুবাজার এবং ভালো দাম নিয়ে দুঃচিন্তায় আছেন এসব খামারিরা। গরু খামারি, ব্যবসায়ী এবং প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলায় ২৪টি নিয়মিত গরুর হাট রয়েছে। এই হাটের বাহিরেও ঈদকে কেন্দ্র করে আরো শতাধিক স্থানে মৌসুমী গরুর হাট বসে। এই সব হাটে স্থানীয়ভাবে যেমন কোরবানির পশু কেনাবেচা হয়, তেমনি অন্য জেলার জন্যও পশু কেনাবেচা হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাও কার্যালয় থেকে নেয়া তথ্য মতে, উৎপাদন বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় চলতি বছর লক্ষ্মীপুরে ৩ লাখ ৬৬ হাজার পশু উৎপাদন হওয়ায় জেলার কোরবানির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশু জেলার বাহিরে পাঠানো যাবে। উৎপাদিত পশুর মধ্যে প্রায় ৩০ হাজারই ষাঁড়। ২ হাজার মোটাতাজাকরণ খামারিদের হাতে রয়েছে এসব ষাঁড়।

এদিকে জেলাজুড়ে গরু উৎপাদন বৃদ্ধি এবং খামারি বৃদ্ধির পেছনে খামার ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়ন ও মাঠ পর্যায়ে লাইভস্টোক সার্ভিস প্রোভাইডার-এলএসপিদের তৎপরতার কথা বলছেন অধিকাংশ খামারিরা।

লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের বাসিন্দা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। জেলার সবচেয়ে বড় অর্গানিক পশু খামারের উদ্যোক্তা তিনি। সদর উপজেলার তেয়ারিগঞ্জ ইউনিয়নের আন্দারমানিক গ্রামে ৭ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তুলেছেন অথৈ এগ্রো কমপ্লেক্স নামে বহুমুখী কৃষি খামার। বর্তমানে তার খামারে বিক্রয়যোগ্য ষাঁড় আছে ১শ। যেগুলোর মধ্যে সর্বনি¤œ এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দামের গরু আছে বলে জানান তিনি। এ বছর কোরবানে তিনি দুই কোটি টাকার গরু বিক্রয়ের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন।

জাহাঙ্গীরের খামারে রয়েছে শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, শিংওয়ালা, সিন্দি, হরিয়ানা, রেড চিটাগাং জাতের ষাড়। তার খামারে উৎপাদিত গরু শতভাগ বিষমুক্ত খাবারে লালন পালন করেন তিনি। নিজস্ব মেশিনের সাহায্যে স্থানীয় ভাবে তিনি নিজের খামারের পশুর জন্য খাবার উৎপাদন করেন। সেজন্য তার খামারের গরুর মাংস শতভাগ নিরাপদ এবং অর্গানিক। খামারি জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, গত বছর ঢাকার বাজারে তিনি ৫০টি গরু বিক্রয় করেছিলেন। সকল পরীক্ষায় তার খামারের গরু ঢাকার বাজারে নিরাপদ সনদ পেয়েছিল। এবারও তার টার্গেট রয়েছে ঢাকায় গরু বিক্র করার। কিন্ত লকডাউনের কারণে তিনি দুঃচিন্তায় রয়েছেন।

অন্যদিকে জেলা জুড়ে অসংখ্য খামারির মধ্যে সদর উপজেলার দালালবাজার মহাদেবপুর এলাকার এমরান চৌধুরী তার খামারে ৪৮টি ষাঁড় বিক্রয়ের জন্য প্রস্তত করেছেন। গ্রাহকের পছন্দ ও সাধ্যের মধ্যে তিনি এসব গরু বিক্রয় করতে পারবেন বলে মনে করেন। তবে তারা মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে করোনার ভয়াবহতা কোন দিকে ঝুঁকে তা নিয়ে।
কথা হয় মৌসুমী গরু ব্যবসায়ী সদর উপজেলার জকসিন বাজারের আক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ ফারুকের সাথে । তিনি জানান, প্রতি বছর রমজান ঈদের পরপরই তিনি কোরবানির জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু এনে কয়েক দিন লালন পালন করেন। পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এ বছরও প্রায় পাঁচশত গরু তিনি বিক্রয় করবেন বলে আশা করছেন। তবে লকডাউনের কারণে সেটা কতটা বাস্তবায়ন হয় তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে ফারুকের।

স্থানীয়রা জানায়, খামারিদের জন্য দিন-রাত ২৪ ঘন্টায়ই উন্নতবীজ এবং চিকিৎসা সেবা নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছে এলএসপি নামে পরিচিত লাইভস্টোক সার্ভিস প্রোভাইডরা। সে কারণেও লক্ষ্মীপুরে দ্রুত গরু খামারের সংখ্যা ও গরু উৎপাদন বেড়েছে। সে কারণে গত কয়েক বছর যাবত জেলার চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাহিরেও গরু বিক্রি হচ্ছে।
এলএসপি এ্যাসোসিয়েশনের লক্ষ্মীপুর জেলা সভাপতি মোঃ আলা উদ্দিন জানান, গরু মোটাতাজাকরণে খামারিদের নিকট বড় সহযোগি এলএসপি। এলএসপিদের তৎপরতার কারণে গত২/৩ বছরে লক্ষ্মীপুরে হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এলএসপিরা খামারিদের নিকট খামারি বন্ধু হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আইয়ুব মিক্রা জানান, জেলার বাণিজ্যিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে ২৮ হাজার ৭শ ৮৬ খামারি ও কৃষক ৩ লাখ ৬৬ হাজার পশু পালন করছেন। যার মধ্যে সরকারি তালিকাভুক্ত ১৫শ ৩৯টিসহ জেলায় ২ হাজার মোটাতাজাকরণ খামার রয়েছে। এ খামারগুলোতে কোরবানি ঈদে বিক্রয়যোগ্য ষাঁড় রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। তিনি আরো জানান, জেলায় গত বছর ২৬ হাজার ষাঁড় কোরবানি হয়েছিল। সে হিসেবে চলতি বছর এ জেলা থেকে প্রায় ৪ হাজার ষাঁড় দেশের অন্য জেলায় বিক্রি করা সম্ভব হবে। ষাঁড় ছাড়াও অন্যান্য বহু পশু জেলার বাহিরে বিক্রয় করা যাবে।



ফেসবুক পেইজ