লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার পাঁচ উপজেলায় তিস্তা তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিবারগুলোর মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তাপাড়ের হাজারও মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।
শনিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৯৫ সেন্টিমিটার। সকাল ৯টায় ২৪ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় ২০ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়। ব্যারেজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ও রাত ৯টার দিকে ৩৫ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হয়েছে। পানির প্রবাহ (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার) বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। চলতি বন্যায় তিস্তা নদীর এটাই সর্বোচ্চ পানিপ্রবাহের রেকর্ড।
এদিকে ধরলা নদীর পানি শিমুলবাড়ী পয়েন্টে এক রাতেই ৬৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় ৩০ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার এবং শনিবার সকাল ৯টায় ৩০ দশমিক ৯৮ মিটার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা, কালীগঞ্জ উপজেলার চর বৈরাতী, ভোটমারী, কাকিনা, হাতীবান্ধা উপজেলার সিদুর্ণা, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ধুবনী, ডাউয়াবাড়ি এবং পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ আবারও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে এসব এলাকার চরাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বহু কাঁচাপাকা সড়ক।
জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিংঙ্গীমার ইউনিয়নের ধুবনী এলাকার ভেসীর বাঁধটি হুমকির মুখে পড়েছে। তিস্তার প্রবল স্রোতে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এটি। স্থানীয়রা বালির বস্তা ফেলে ভাঙনরোধে কাজ করছেন।
উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের আনোয়ার হোসেন বলেন, গতরাত থেকে বালুর বস্তা ফেলে গড্ডিমারীর একমাত্র সড়কটি রক্ষা করেছি। তিস্তার স্রোতে উপজেলার সাথে যোগাযোগের সড়কটি যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে।
জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহে তিস্তা ও ধরলার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যা কমে গিয়ে বন্যার উন্নতি ঘটে। কিন্তু এক সপ্তাহে না যেতেই ফের উজানের ঢল ও ভারীবর্ষণের কারণে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার থেকে বর্তমানে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই করছে।
এছাড়া তিস্তা-ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সৃষ্ট বন্যায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো শিশু-বৃদ্ধ ও গবাদি পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের ৯৫টি বাড়ি তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, ইউনিয়নের ৯৫টি বাড়িসহ পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, সকালে পানি কমে এলেও বিকেল থেকে আবারও বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাপাড়ের লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর জানান, জেলায় তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়া পরিবারগুলোর জন্য ১২৪ মেট্রিক টন খাদ্যসামগ্রী ও নগদ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।